ওল-ই ধন্বন্তরী।
ওল হল একটি মূলজ সবজি। মাটির নীচের ফসল। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে মাঠ থেকে এই ফসল ওঠে। তবে সারা বছর বাজারে এর দেখা মেলে। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম হল— অ্যামরফোকালাস ক্যাম্পানুলাটাস।
পুষ্টিগুণ ও পুষ্টি বিজ্ঞানীদের কথায় প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযােগী অংশে আছে। কার্বোহাইড্রেট–১৮.৪ গ্রাম ক্যালসিয়াম—৫০ মিগ্রা, প্রােটিন—১.২ গ্রাম
লােহা-০.৬ মিগ্রা. । ফ্যাট-০.১ গ্রাম
ফসফরাস-৩৪ মিগ্রা. আঁশ-০.৮ গ্রাম
নিকোটিনিক অ্যাসিড-০.৭ মিগ্রা.। থায়ামিন ০৬ মিগ্রা..
ভিটামিন-এ-৪৩৪ আই. ইউ.। উপকারিতা ।
ওলের ডগার আঠা লাগালে বােলতা বা ভীমরুলের কামড়ের জ্বালা দূর হয়। . নিয়মিত ওলের ডালনা বা ওলভাতে বা শুধুই ওলসেদ্ধ খেলে অর্শ অবশ্যই সারবে। ৯ মিষ্টি ওল, তীক্ষ্ণ, উষ্ণ, ছেদক ও কযুক্ত। অর্থাৎ এর স্বাদ তীব্র, শরীর গরম করে এবং ফোড়া ফাটিয়ে দেয়, অর্থাৎ ছেদ সৃষ্টি করে। 4 যে ওল খেলে গলা চুলকোয় সেই কুটকুটে বুনাে ওলেরও ওষুধ হিসেবে অনেক গুণ আছে। আয়ুর্বেদের মতে বুনাে ওল শ্রীপদ (পায়ের গােদ-হাতির মতাে ফোলা পা), গােদ, আব, অখিদে, শুলব্যথা, দাঁতের ব্যথার এবং শােথ রােগের মহৌষধ।
যে ওল খেলে চুলকোয় না সেই ভাল জাতের ওল পুরনাে পেটের অসুখ সারিয়ে দেয়। কিন্তু চুলকানি হলে ওল না খাওয়াই ভাল। - তলে আছে বায়ু ও কফ নাশ করবার গুণ। হজমও হয় সহজেই। রক্তপিত্তের প্রকোপ বাড়িয়ে দেয়। এ ওলের উঁটা ও ওলের কচি শাক দিয়ে তৈরি তরকারি বা ঘণ্ট শরীরের পক্ষে খুব উপকারী। এ বুনাে ওল মল রােধ করে, কষায়, হালকা, তীক্ষ্ম, রুচিকর। কাশি, বমি, বায়ু গােলক বা মরােগ ও শূল ব্যথা
সারায়, কৃমি নাশ করে।
ওল শুকিয়ে গুঁড়াে করে, ঘিয়ে ভেজে চিনি মিশিয়ে খেলে আমাশয় সারে।১বার করে দিন। ০ ওল টুকরাে করে কেটে ঘিয়ে ভেজে খেলে অর্শ সেরে যায়। ০ ওল খাওয়ায় রুচি উৎপন্ন করে। রােজ ১বার করে ১ মাস।কাচাকলা-র মাহাত্ম্য
কঁাচাকলা হল একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি। এটি পাকা কলা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কাঁচা অবস্থায় গাছ থেকে কাটা বা ভােলা হয়। সারাবছর বাজারে একে পাওয়া যায়। এর। বিজ্ঞানসম্মত নাম হল—সুসা প্যারাডিসিকা।
পুষ্টিগুণ ও কাঁচাকলা অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি ১০০। গ্রাম খাদ্যোপযােগী অংশে আছেকার্বোহাইড্রেট-১৪.০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম—১০ মিগ্রা, প্রােটিন—১.৪ গ্রাম।
ফসফরাস ২৯ মিগ্রা, ফ্যাট—৩.২ গ্রাম, আঁশ ০.৭ গ্রাম পটাশিয়াম—১৯৩ মিগ্রা.. লােহা-৬.২৭ মিগ্রা,
থায়ামিন-০৫ মিগ্রা, ভিটামিন-‘এ’—৩০ আই. ইউ।
রিবোেফ্লাবিন-.০২ মিগ্রা, অক্সালিক অ্যাসিড-৪৮০ মিগ্রা.
ভিটামিন-সি’-২৪ মিগ্রা,
উপকারিতা ঃ ০ একটি কাঁচাকলা খােসা সমেত চাক চাক করে কেটে প্রতি রাত্তিরে জলে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে ঐ জল খেলে কঠিন আমাশয় রােগ নির্মূল হয়। এইভাবে এক মাস খেতে হবে। •০ পেটের অসুখে, আমাশয় ও রক্ত আমাশয় রােগে কাচকলা সেদ্ধ করে টাটকা টক দইয়ের সঙ্গে মেখে খেলে রােগ সারে। ১ মাস খেতে হবে। ০ কলা গাছের শুকনাে শেকড় গুঁড়াে করে অল্প পরিমাণে খেলে পিত্ত লােগ সারে। রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া রােগেরও এটি একটি মহৌষধ। ১ মাস খেতে হবে।। 0 অনেকের মতে কলা গাছের শেকড়ের রসের সঙ্গে ঘি ও চিনি মিশিয়ে খেলে প্রস্রাবের অসুখ বা মেহ রােগ সারে। রােজ ১ বার করে ১৫দিন। ০ কাচকলা শুকিয়ে গুঁড়াে করে প্রতিদিন অল্প পরিমাণে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে যৌন ব্যাধি সারে ও প্রস্রাবের অসুখ সারে। ১ বার করে ১ মাস। এ একেবারে কচি কলাপাতা মিহি করে বেটে দুধে মিশিয়ে ঘন ক্ষীরের মতাে করে। খাওয়ালে মেয়েদের প্রদর রােগে উপকার হয়। রােজ ১ বার করে ১ মাস।
| কচু, কচুপাতা, কচুশাক কেন খাবেন।
কচু রক্তপিত্ত (নাক মুখ থেকে রক্ত পড়া) দূর করে, মল রােধ করে, বায়ুর প্রকোপ দূরকরে। কচু শীতল, খিদে বাড়ায়, শরীরের বল বৃদ্ধি করে, মায়েদের স্তনের দুধ বাড়িয়ে দেয়মলের বেগ কমিয়ে দেয়। কচু বেশী খেলে প্রস্রাব বেশি হয় কিন্তু সেইসঙ্গে কফ ওবেড়ে যায়। কচু গাছের শেকড়ে আছে ধাতু বৃদ্ধির শক্তি। ০ কচুপাতা বা কচুর শাক খেলে স্তনের দুধ বাড়ে। ০ কচু ,তা সেদ্ধ করে বা ভাতে দিয়ে ভাতের সঙ্গে মেখে পরপর তিন দিন " প্রস্রাবের জ্বালা দূর হয়ে যায়।
কচু শাক পুড়িয়ে তার ছাই তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ফোড়ায় লাগালে ফোড়া ফেটে যায়।
শরীরের কোনাে স্থানে কেটে গেলে সেখানে কচুর ডাটার আঠা লাগালে রক্তপড়া বন্ধ হয় এবং ক্ষতও সারে। 0 কচুর ডাটা চেছে নিয়ে তার প্রলেপ অর্শ বা যে জায়গায় আঘাতের জন্যে রক্ত জমে আছে সেইখানে লাগালে আরাম পাওয়া যায়।
কচুর ডাটার রসে একটু নুন মিশিয়ে শরীরের যে জায়গা ফুলে আছে সেখানে লাগালে ফোলা তাড়াতাড়ি কমে।
কষ্ঠ, দাদ, পেটের অসুখ, আমাশয়, রক্তপিত্ত প্রভৃতি অসুখে কচু খাওয়া একেবারেই। বারণ। অজীর্ণ রােগে কচু খাওয়া উচিত নয়।
দু চা চামচ মানের গুড়াে অল্প দুধে গুলে খেলে জ্বর, পেটের অসুখ ও পিলের রােগ কমে যায়।
মানের শুঠ, চালের গুঁড়ােতে কিছু দুধ, জল ও আন্দাজ মতাে চিনি দিয়ে পায়েস তৈরি করে খেলে পেটের অসুখে উপকার দেয়।
অল্প গরম দুধের সঙ্গে পুরােনাে মানকচু ওঁঠ মিশিয়ে খেলে শােথ রােগ ও পিলের রােগ কমে।
পুলটিস লাগিয়ে ফোড়ার মুখ না হলে মানকচু গাছের পচা উঁটা জল না দিয়ে শুধুই কেটে নিয়ে তার প্রলেপ ফোড়ার লাগালে ফোড়া ফেটে গিয়ে পুঁজ রক্ত ইত্যাদি বেরিয়ে যাবে এবং ফোড়া সেরে যাবে।
মুখের ভেতর ঘা হলে মানকচু পুড়িয়ে তার ছাই মধুর সঙ্গে মিশিয়ে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
|| আলু-র তুলনা জগতে মেলে না।
[ আলু হল একটি কন্দজ সবজি। সারাবছর এটি পাওয়া যায়। আলু হল কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ শর্করা পধান সবজি। মাটির নীচে থাকা কন্দে খাবার জমা হওয়ার ফলে এটি স্ফীত বা মােটা হয়। আর এই স্ফীত কন্দই হল আলু। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম হল-সােলানাম টিউবারােসাম।
পুষ্টিগুন ও আলুর পুষ্টিগুন নেহাত কম নয়। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের কথায় প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযােগী আলুতে আছে— কার্বোহাইড্রেট—২২.৬ গ্রাম।
লােহা—০.৭ মিগ্রা, প্রােটিন—১.৬ গ্রাম
পটাশিয়াম-২৪৭ মিগ্রা, ফ্যাট—০.১ গ্রাম, আঁশ ০.৪ গ্রাম ভিটামিন ‘এ’-৪০ আই. ইউ.
ক্যালসিয়াম-১০ মিগ্রা.। নিকোটিনিক অ্যাসিড-১২ মিগ্রা.
ভিটামিন-সি-১৭ মিগ্রা. রিবােফ্লাবিন-০১ মিগ্রা,
থায়ামিন–০.১ মিগ্রা. একটি বড় মাপের সেদ আল থেকে আমরা প্রায় ২২০ ক্যালােরি শক্তি পেতে পার।
ফসফরাস—৪০ মিগ্রা,
আলু খেলে আমরা তাড়াতাড়ি শক্তি পেতে পারি। আলুতে থাকা। ভিটামিন-সি এবংভিটামিন-বিআমাদেরশরীরের দুর্বলতাসারাতে সাহায্য করেএবংশরীরের। ভিতরে রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বাড়িতে তােলে। আলুতে কোন চর্বি বা ফ্যাট প্রায় নেই বললেই চলে, অথচ আছেলােহা ও ক্যালসিয়ামের মতাে খনিজ উপাদান। এরা হার্টের অসুখ প্রতিরােধে। সাহায্য করে। খােসাসমেত আলু প্রায় ৩০ মিলিগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন সরবরাহ করতে সক্ষম। এবং এটি শরীরের দৈনিক চাহিদার অর্ধেকটা মেটায়।আলুতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকার। জন্য এটি শরীরের উচ্চ-রক্তচাপ (হাই-ব্লাড প্রেসার) কমাতে দারুণভাবে সাহায্য করে। আবার। আলুতে এক ধরনের উৎসেচক (প্রােটিনেস ইনহিবিটর) থাকায় এটি ক্যানসারের বিরুদ্ধে। প্রতিরােধ গড়ে তুলতে পারে। নিয়মিত আহারের সঙ্গে আলু খেলে প্রস্রাবের জ্বালা থাকবে না। এবং প্রস্রাবের নিঃসরণঠিকমতেহবে।এছাড়াওসন্তান প্রসবের পরমায়েরআহারেআলদিলে। স্তনে দুধের পরিমাণ বাড়বে এবং এতে শিশু ঠিকমতাে মায়ের বুকের দুধ পাবে।
ব্যবহার পদ্ধতি ও আহারে আপনি আলকে সেদ্ধ, ভাজা, ঝোল এবং তরকারি রান্না করে খেতে পারেন। তবে আলুর উপকারিতা পেতে হলে তেল, ঝাল ও মশলা এড়িয়ে
চলবেন।।
সাবধানতা ও যাঁরা ডায়াবেটিস রােগে ভুগছেন তারা আহারে যতটা পারেন আল খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
| ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি।
কপি হল শীতকালের বাজারে প্রধান আকর্ষণ। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম হল-ব্রামিকা অলিরাসিয়া জাত—বট্রাইটিস।
পুষ্টিগুন ও ফুলকপি কিন্তু পুষ্টিগুনে ঠাসা। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের কথায় প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযােগী অংশে আছে। কার্বোহাইড্রেট-৪ গ্রাম।
ক্যালসিয়াম—৩৩ মিগ্রা, প্রােটিন-২.৬ গ্রাম
ফসফরাস-৫৭ মিগ্রা, ফ্যাট-০.৬ গ্রাম
লােহা-১.৫ মিগ্রা, আঁশ—১.২ গ্রাম
পটাসিয়াম-১৩৮ মিগ্রা. ভিটামিন-এ'-৫১ আই. ইউ.
সােডিয়াম-৫৩ মিগ্রা, নিকোটিনিক অ্যাসিড-১ মিগ্রা,
ভিটামিন-সি’—৫৫ মিগ্রা. উপকারিতা । ০ কপি স্তন্যের দুধ বাড়িয়ে দেয়, মধুর, বীর্যবর্ধক, শীতল, গরিষ্ঠ। সহজে হজম হয়, বা । সৃষ্টি করে এবং পিত্ত ও কফ নাশ করে। ০ গর্ভাশয়ের বল বৃদ্ধি করে।
গাঁটকপি বা ওলকপি রসে মধুর, উষ্ণবীর্য (উগ্ৰগুণ সম্পন্ন করা), সারক (মলমূত্র বা নিষ্কাশণ করে), রুচিকর, কফ নাশক, বাতকারক এবং পিত্ত প্রকোপক। ০ ওলকপি প্রমেহ, খাসের অসুখ, কফ ও কাশিতে উপকার দেয়। n কপির বীজ সারক (বায়ু মল মূত্র নিষ্কাশনে সাহায্য করে), কর্মে উদ্দীপ্ত করে (দীপ লোক পাচা এবং কৃমিনাশক। যারা রক্তপিত্ত (স্কাতি) রােগে ভুগছেন তাদের কপি খাওয়াতে পর ফোড়ার ওপর বাঁধাকপির পাতা বেঁধে রাখা হয়
0 Comments